[বিদ্র: জনস্বার্থে এই পোস্ট জনাব মাসরুফ হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার (ক্যান্টনমেন্ট জোন),গুলশান অপরাধ বিভাগ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর অনুমতি ক্রমে এখানে পোস্ট করা হলো]
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর অনুমতি ক্রমে এখানে পোস্ট করা হলো]
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার অল্প ক'দিন পরের কথা, তখন আমি উত্তরা ক্রাইম ডিভিশনে কর্মরত। শুক্রবারে সাধারণত আমি অফিস করিনা,তবুও ওদিন গিয়েছিলাম আলিয়স ফ্রসেসে।ফ্রেঞ্চ স্পিকিং দেশগুলোতে ইউ এন মিশন করতে গেলে ফ্রেঞ্চ জানা বাধ্যতামূলক- এটা শুনে খোঁজ খবর করতেই যাওয়া। ফেরার পথে হঠাৎ শুনি আমার মোবাইল ফোনে কে জানি বার বার চেষ্টা করছে। কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে কয়েকবার রিসিভ করলাম, কথা ঠিকমত শোনা যাচ্ছিলনা। তবুও খানিকটা সন্দেহ হওয়ায় যা শুনলাম তাতে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যাবার দশা!
"স্যার, আমি উত্তরার লেক রোড থেকে বলছি। আমরা আটজন লিফটে উঠেছিলাম, লিফট ছিঁড়ে আমরা সবাই এখন আটকা পড়েছি।বাসায় কেউ নেই,মোবাইল ফোনে আপনার নাম্বার ছিলো- এখন প্লিজ স্যার আমাদেরকে বাঁচান"।
দ্রুত ওয়্যারলেস হ্যান্ডসেটে নিকটস্থ মোবাইল প্যাট্রোল টিমকে ঘটনাস্থলে যেতে বললাম। সেবার স্রষ্টার অপরিসীম দয়ায় আটজনকেই অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছিলাম।
লিফটের ওই ভদ্রলোক দুদিন পরে আমার অফিসে এসেছিলেন বড়সড় একটা ফুলের তোড়া নিয়ে। অল্প কিছুদিন আগে উত্তরার ছয়টি থানা কভার করে এরকম একটি এ্যান্ড্রয়েড এ্যাপ রিলিজ করা হয়েছিলো উত্তরা ক্রাইম ডিভিশনের পক্ষ থেকে। ওই চরম বিপদের মুহূর্তে ওটা ব্যবহার করেই তিনি আমার সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন, যার ফলে রক্ষা পেয়েছিল আটটি অমূল্য প্রাণ।
এই এ্যাপটি আমাদেরকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তৈরি করে দিয়েছিলো বুয়েটের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তারিক ও তন্ময়। ক্যাডেট কলেজের ছোটভাই হিসেবেই ওদের সাথে আমার পরিচয়, আর দেশের জন্যে কিছু করার তাগিদ থেকেই ওদের এই "ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো"-র ব্যবস্থা।
উত্তরার সাফল্ল্যে উজ্জীবিত হয়ে আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার সবকটি পুলিশ স্টেশনকে এধরণের একটি এ্যাপের অধীনে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিই, যেটি অনুমোদন করেন ডিএমপি কমিশনার জনাব বেনজীর আহমেদ। মাসখানেকের প্রচেষ্টায় সমগ্র ঢাকার জন্যে একটি এ্যান্ড্রয়েড এ্যাপ দাঁড়ায়, যেটি এবছরের শুরুর দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে প্রায় ৫০,০০০ ব্যক্তি এটি ব্যবহার করছেন।পাঠকদের জন্যে এই এ্যাপটির বিশেষ বিশেষ ফিচারগুলোর বর্ণনা দিচ্ছিঃ
১) ঢাকার সকল থানার ওসি এবং ডিউটি অফিসারের নম্বর সহ এতে রয়েছে প্রতিটি থানার ঠিকানা এবং ম্যাপ। এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করে ঢাকার যে কোন স্থান থেকে আপনি আপনার সবচেয়ে কাছের থানাটি সহজেই খুঁজে বের করতে পারবেন; সেই সাথে গুগল ম্যাপে আপনাকে সেই থানায় যাওয়ার পথও দেখিয়ে দেবে এটি। ওসি এবং ডিউটি অফিসার যেন আপনার ডাকে সাড়া দেন সেজন্যে সব ওসিদের ডেকে স্বয়ং কমিশনার অফিস থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
২) ডিএমপির ফেসবুক পেইজে সহজেই যে কোন পোস্ট বা মেসেজ দেয়ার জন্যে এতে রয়েছে একটি ‘ফেসবুক বাটন’ যা আপনাকে সরাসরি ডিএমপির সর্বশেষ তথ্য ও সেবা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।
উপরের ছবিতে ইংরেজি "এ" লেখা বাটনটি ল্যঙ্গুয়েজ বাটন, এর মাধ্যমে বাংলা বা ইংরেজি যে কোন ভাষায় পুরো এ্যাপটি দেখা যাবে। এর নীচেই ফেসবুক বাটন, তারপর ম্যাপ বাটন, যেটি আপনার অবস্থান থেকে নিকটস্থ থানার ম্যাপ দেখিয়ে দেবে।
৩) ডিএমপির একটি নিজস্ব ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে, যেটির সাহায্যে পুলিশ সদস্যরা সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে রক্তদান করে থাকেন।জরুরী প্রয়োজনে ডিএমপির ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত সংগ্রহ এবং এ সম্পর্কিতে অন্যান্য তথ্য জানার জন্যে এতে সংযোজন করা হয়েছে একটা ‘ব্লাড বাটন’।
৪) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিটের নাম উইমেন সাপোর্ট এ্যান্ড ইনভেস্টিগশন ডিভিশন। এই ইউনিটটিতে কন্সটেবল থেকে ডেপুটি কমিশনার পর্যন্ত সবাই নারী, এবং এদের মূল উদ্দেশ্য নারী ভিকটিমদের সহায়তা দেয়া। এদের ২৪ ঘন্টা হেল্পলাইন রয়েছে। কোন নারী ভিকটিম এই ইউনিটের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে ব্যবহার করতে পারেন নারী বাটন।
৫) ডিএমপি-ম্যাপ থেকে খুব সহজেই আপনি যে কোন থানার অবস্থান ছবি তুলে পাঠাতে পারবেন আপনার কোন বন্ধু বা নিকটজনকে। জরুরী প্রয়োজনে এই অ্যাপ্লিকেশনে থাকা যে কোন ফোন নম্বর আপনার কোন বন্ধুকে এসএমএস করতে পারবেন মাত্র এক ক্লিকেই।
৬) হঠাৎ রাস্তায় ঘটা কোন দুর্ঘটনায় ডিএমপির হটলাইনে জানানোর জন্যে এতে রয়েছে একটি ‘কুইক কনটাক্ট বাটন’ যা ব্যবহার করে সহজেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে যে কোন তথ্য দেয়া যাবে সরাসরি ফোনে বা ইমেইলে। কোন অপরাধী সম্পর্কে পুলিশকে কোন তথ্য দেয়া বা ছবি পাঠানো কিংবা আপনার এলাকার কোন অপরাধ পুলিশকে জানাতে এখন আর কষ্ট করে থানায় আসতে হবে না, মাত্র একটি ক্লিকই যথেষ্ট।
৭) ট্রাফিক সম্পর্কিত তথ্য ও সহায়তার জন্যে রয়েছে ট্রাফিক বাটন, যেটির মাধ্যমে ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত অফিসারদের সাথে সরসরি কথা বলতে পারবেন এবং ট্রাফিক আপডেট জানতে পারবেন। নীচের ছবিতে আরো কয়েকটি বাটন আছে, যেমনঃ বিদেশী নাগরিকদের সহায়তার জন্যা "চ্যান্সেরি বাটন", সবগুলো থানার ঠিকানা, ম্যাপে অবস্থান ও ফোন নম্বর নিয়ে বিল্ডিং-আকৃতি বাটন ইত্যাদি।
৮) এছাড় এই Application ডিএমপির বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে।
৯) ঢাকাবাসীর ব্যবহারের জন্যে এই মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে গত ১৩ জানুয়ারি উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ। এর পরেই গুগল প্লো স্টোরে সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এটি। যে কেউ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিচের ঠিকানা থেকে এটি ডাউনলোড করতে পারবেন।
ডাউনলোড লিংক: http://goo.gl/UkdJoZ
গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে "ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ" লিখলেও পেয়ে এটি সহজেই পেয়ে যাবেন।
অ্যাপ্লিকেশনটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে ফেসবুকের এই পেইজ থেকে এবং আগ্রহীরা এখানে সরাসরি নির্মাতাদের সাথে কথা বলার এবং বিভিন্ন মতামত শেয়ার করারও সুযোগ পাবেন:
এবার একটি মজার তথ্য দিই, এই এ্যাপটি তৈরি করতে তারিক আর তন্ময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছ থেকে মজুরী হিসেবে নিয়েছে মাত্র ৫০০ টাকা।তাদের বক্তব্যঃ
ছয় বছর ক্যাডেট কলেজ আর ৪ বছর বুয়েট- দেশের টাকাতেই আমাদের এতদূর আসা।তাই দেশমাতৃকার প্রতি আমাদের এই ক্ষুদ্র নিবেদন। আমরা চাই আমাদের মত আরো অনেক মানুষ নিজেদের জায়গা থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কিছু একটা করুক।
তারিক আর তন্ময় আমার ক্যাডেট কলেজের ছোটভাই- এই গর্বে আজকাল আমি মাটির তিন হাত উপর দিয়ে হাঁটি। ওদের এই বক্তব্যের পরে আমাকে কি খুব একটা দোষ দেয়া যাবে?
পরিশিষ্টঃ
ক) উত্তরার এ্যাপটি বাংলাদেশ সরকারের যে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রথম এ্যাণ্ড্রয়েড এ্যাপ, আর ডিএমপি এ্যাপটি দ্বিতীয়।ডিএমপি এ্যাপটির মূল কাজ পুলিশ ও জনগণের মধ্যে দ্রুত যোগাযোগ ঘটানো এবং তথ্য দিয়ে পুলিশি সেবা সরাসরি নাগরিকদের হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেয়া। আমরা জানি, পুলিশের পক্ষ থেকে নানারকম সমস্যা হতে পারে, হয়ত কেউ কেউ ফোন করেও আশানুরূপ সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে অভিযোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে।এসব সমস্যা নিয়েও আমরা আশাবাদী, কারণ অন্ততঃ শুরু তো হল!
খ) এই এ্যাপটির অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের ( আই ফোন, উইন্ডোজ ইত্যাদি ) কাজ শেষের পথে, মাসখানেকের মধ্যে রিলিজ দেয়া হবে। এছাড়াও, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সারা দেশের সবগুলো থানা, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এবং হাসপাতাল একত্রিত করে একটি এ্যাপের কাজ শুরু হয়েছে, যেটি এবছরের মাধ্যমে রিলিজ দেয়া হবে।
গ) জানি, হাজারটা সীমাবদ্ধতা আছে। তাই বলে কি আমরা থেমে থাকব? বাংলাদেশ পুলিশের মত "ভাঙ্গাচুরা" (??!!) বিভাগ যদি এ্যাপ বের করে ফেলতে পারে, বাকিদের পক্ষে কি কি করা সম্ভব সেটা চিন্তা করলে ইচ্ছে করে আকাশে উড়ে বেড়াই।
আমাদের দেশটাকে আমরা স্বপ্নের দেশ হিসেবে দেখতে চাই, এবং সেটা খুব তাড়াতাড়ি।
চলুন, হাত লাগাই!
মাসরুফ হোসেন
সহকারী পুলিশ কমিশনার
(ক্যান্টনমেন্ট জোন)
গুলশান অপরাধ বিভাগ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ
০১৭১৩৩৯৮৩৪২
সহকারী পুলিশ কমিশনার
(ক্যান্টনমেন্ট জোন)
গুলশান অপরাধ বিভাগ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ
০১৭১৩৩৯৮৩৪২
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন